আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় নারায়ণগঞ্জ জেলার অভ্যুদয়, ২৯২ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয় যা ৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। ১৮৮২ সালে নারায়ণগঞ্জ মহকুমা ঘোষিত হয়, যা ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হয়। ২০১১ সালের ৫ই মে নারায়ণগঞ্জ সদর পৌরসভা, বন্দর থানার কদমরসুল ও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা সমন্ময়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সর্ম্পকে কিছু তথ্যঃ-
নারায়ণগঞ্জ জেলা রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পূর্বে, ২৩°৩৩’ থেকে ২৩°৫৭’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৬’ থেকে ৯০°৪৫’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এর জেলা উত্তরে নরসিংদী জেলা, গাজীপুর জেলা এবং দক্ষিণে মুন্সীগঞ্জ জেলা, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও কুমিল্লা জেলা, পশ্চিমে ঢাকা। নারায়ণগঞ্জ জেলার মোট আয়তন ৬৮৪.৩৫ বর্গ কিলোমিটার। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ১৩ মিটার বা ৩২ ফুট।
ভূসংস্থান অনুসারে এ জেলা গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকার পাললিক মাটির সমতল ভূমি। জেলার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৭৭৭ মিলিমিটার। বছরের অধিকাংশ সময়ই এখানে ক্রান্তীয় গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো এ উপজেলাতেও এপ্রিল থেকে জুন হলো সবচেয়ে উষ্ণতম মাস, যার তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ ৩৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি হলো সবচেয়ে শীতলতম মাস, তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নারায়ণগঞ্জ জেলার অভ্যুদয়:-
৫২-এর ভাষা আন্দোলন নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে স্মরণীয় ও বরণীয় এক অধ্যায়। যেহেতু নারায়ণগঞ্জ থেকে ২০ কি.মি. অদূরেই অবস্থিত ঢাকা জেলা, তাই পার্শ্ববর্তী জেলা হিসেবে পাকিস্তানি স্বৈরশাসককে উৎখাত করার জন্যই এ এলাকার জনগণ ছিল প্রতিবাদমুখর। তৎকালীন ছাত্রনেতা শামসুজ্জোহা, বজলুর রহমান, বদরুজ্জামান, মফিজ উদ্দিন, হাবিব রশিদ, সুলতান মাহমুদ মলিক, কাজী মজিবুর , শেখ মিজান ও এনায়েত নগরের শামসুল হক প্রমুখের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে সক্ষম হন। এখনও এ অঞ্চলের প্রতিটি মানুষ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে আত্মায় ধারণ করে প্রতিবৎসর ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে এক বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাধীন সুসংঘঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার এম.এ গনি, মোহাম্মদ আলী, মোঃ নাসির উদ্দিন, মহিউদ্দিন রতন, নুরুল ইসলাম, মোঃ সামসুল হক, মমিনুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। ফতুল্লার পঞ্চবটিতে ডালডার মিল নামের এলাকা ছিল পাকসেনাদের দখলে।
প্রতিরাতে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে যমুনা জেটির কাছে নিয়ে আসত এবং গুলিবর্ষণ করে হত্যার পরে লাশগুলো বুড়িগঙ্গা নদীর জলে নিক্ষেপ করে ভাসিয়ে দেওয়া হতো বলে জানা যায়। মুক্তিযোদ্ধা দুলাল ও আমিনুর ডিক্রিরচর ও কানাই নগরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি শক্তিশালী গ্রুপ তৈরী করেন। বাবুরাইলের মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল আশ্রাফ যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হন।

আরও পড়ূনঃ
